Sanchar sathi app
প্রত্যেক স্মার্টফোনে থাকবে বাধ্যতামূলক “সরকারি অ্যাপ”!
যাবে না ডিলিট করা!
ভারত সরকার নিয়ে আসছে নতুন সরকারি অ্যাপ “সঞ্চার সাথী” যা প্রত্যেক নতুন ফোন এবং পুরোনো সব স্মার্টফোন এ ইনস্টল বাধ্যতামূলক ভাবে থাকতে হবে।
তোমরা চাইলে এটি ডিলিটও করতে পারবে না। সরকার বলছে, এই অ্যাপ মানুষের সুরক্ষা বাড়াবে, সিম জালিয়াতি কমাবে, আর হারানো ফোন খুঁজে পেতে সাহায্য করবে। কিন্তু সাধারণ মানুষের মনে উঠছে অনেক প্রশ্ন, সন্দেহ ও ভয়।
সঞ্চার সাথী অ্যাপ মূলত তিনটি কাজ করে—
১) হারানো ফোন ব্লক/আনব্লক করা,
২) আপনার নামে কতগুলো সিম চলছে তা দেখা,
৩) ফোনটি আসল কিনা তা চেক করা।
সরকারের ব্যাখ্যা হলো— দেশে সিম জালিয়াতি, ফেক ফোন, প্রতারণা, OTP জালিয়াতি খুব বেড়েছে, তাই সবাইকে নিরাপদ করতে এই অ্যাপকে বাধ্যতামূলক করা জরুরি।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে— এই অ্যাপ যদি জোর করে প্রতিটি ফোনে ইনস্টল করা থাকে, আর মুছে ফেলা না যায়, তাহলে এটিকে সাধারণ মানুষ আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। এটি সিস্টেম অ্যাপ হয়ে যাবে, যার অ্যাক্সেস থাকবে অনেক সংবেদনশীল ডেটাতে— যেমন লোকেশন, ডিভাইস আইডি, নেটওয়ার্ক ব্যবহার, ইত্যাদি। ব্যবহারকারী বুঝতেও পারবে না ফোনের ভেতরে কী চলছে। বা আড়ি পাতছে কিনা!
এখানেই ভয় শুরু হচ্ছে। যেকোনো অ্যাপ যখন জোর করে ইনস্টল করা হয়, তখন সেটি শুধু সুবিধা দেয় না— নজরদারির পথও খুলে দেয়। চীনে এভাবেই সরকারি অ্যাপের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের চলাফেরা, কেনাকাটা, অনলাইন ব্যবহার, কী কথা বলছে, কার সাথে কথা বলছে— সবকিছু ট্র্যাক করা হয়। ভারতের ক্ষেত্রেও মানুষের মনে সেই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে— এই অ্যাপ কি শুধু সুরক্ষার জন্য, নাকি এর মাধ্যমে নাগরিকদের উপরে আরও বড় ডিজিটাল নিয়ন্ত্রণ বসানো হবে?
এছাড়া, ভারতের সরকারি প্ল্যাটফর্মগুলোর নিরাপত্তা আগেও অনেকবার প্রশ্নের মুখে পড়েছে। আধার, ভোটার ডেটা— সব জায়গায় ডেটা লিক হয়েছে। তাহলে কোটি কোটি মানুষের ফোনে বাধ্যতামূলকভাবে থাকা একটি অ্যাপ যদি হ্যাক হয় কিংবা সার্ভার হ্যাক হয়, তাহলে মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য বড় বিপদে পড়ে যেতে পারে।
আরেকটি বড় বিষয় হলো মানুষের স্বাধীনতা। নিজের ফোনে কোন অ্যাপ থাকবে বা থাকবে না— তা ঠিক করার অধিকার মানুষেরই থাকা উচিত। সরকার যদি জোর করে অ্যাপ বসিয়ে দেয়, আর ডিলিট করতে না দেয়— তা হলে সেটি ডিজিটাল স্বাধীনতা ও গোপনীয়তার বিরুদ্ধে যায়। যেটা চীন এবং উত্তর কোরিয়ার মতন দেশগুলো তে আছে।
সব মিলিয়ে, সঞ্চার সাথী অ্যাপের উদ্দেশ্য ভালো হলেও, যদি এটি জোর করে সকল ফোনে বসানো হয়, সেটি মানুষের ওপর অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ, সম্ভাব্য নজরদারি, আর বড় ধরণের গোপনীয়তার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। সুরক্ষার নামে এমন সিদ্ধান্ত যেন ভবিষ্যতে মানুষের স্বাধীনতাকে বিপদে না ফেলে— এটাই এখন সবচেয়ে বড় উদ্বেগ।
Comments
Post a Comment